প্রপার্টি কেনা-বেচা একটি জটিল প্রক্রিয়া যার অনেক গুরুত্বপূর্ণ আইনি দিক রয়েছে। তাই বাংলাদেশে প্রপার্টি কেনা-বেচার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইনি পরামর্শ ও পদ্ধতি অনুসরণ করা আবশ্যক। নিচে একটি সম্পূর্ণ গাইড দেওয়া হলো যা আপনাকে প্রপার্টি কেনা-বেচার সময় আইনি সমস্যাগুলি এড়াতে সাহায্য করবে।

১. প্রপার্টির ডকুমেন্ট যাচাই

প্রপার্টি কেনার আগে সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্টগুলো যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নলিখিত ডকুমেন্টগুলো যাচাই করা উচিত:

  • দলিল (Deed): প্রপার্টির মূল মালিকানা প্রমাণ করার জন্য দলিল যাচাই করতে হবে। দলিলের সকল তথ্য সঠিকভাবে যাচাই করা উচিত।
  • মিউটেশন সার্টিফিকেট: প্রপার্টির মালিকানার পরিবর্তনের তথ্য এই সার্টিফিকেটে উল্লেখ থাকে। এটি প্রপার্টির প্রকৃত মালিকানার প্রমাণ দেয়।
  • খাজনা রসিদ: প্রপার্টির খাজনা রসিদ যাচাই করে নিশ্চিত হন যে প্রপার্টির সকল খাজনা পরিশোধ করা হয়েছে।
  • ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান: যদি প্রপার্টি কোন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টে থাকে, তবে ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান যাচাই করা উচিত।

২. টাইটেল সার্চ

টাইটেল সার্চ করে নিশ্চিত হন যে প্রপার্টির উপর কোন লিয়েন বা ইকাম্বারেন্স নেই। টাইটেল সার্চের মাধ্যমে প্রপার্টির প্রকৃত মালিকানা এবং প্রপার্টির ওপর কোনো আইনি ঝামেলা আছে কিনা তা জানা যায়।

৩. বিক্রেতার যাচাই

প্রপার্টি বিক্রেতার পরিচয় এবং বৈধতা যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট বা অন্যান্য আইডেন্টিফিকেশন ডকুমেন্ট যাচাই করে নিশ্চিত হন যে বিক্রেতা প্রপার্টির বৈধ মালিক।

৪. চুক্তিপত্র (Sale Agreement)

প্রপার্টি কেনা-বেচার সময় একটি চুক্তিপত্র তৈরি করা আবশ্যক। চুক্তিপত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো উল্লেখ থাকতে হবে:

  • প্রপার্টির বিস্তারিত বিবরণ
  • ক্রয়মূল্য এবং পরিশোধের পদ্ধতি
  • লেনদেনের সময়সীমা
  • প্রপার্টির মালিকানার স্থানান্তরের শর্তাবলী
  • কোন ধরনের ঝামেলা বা বিরোধ দেখা দিলে কিভাবে সমাধান করা হবে

৫. নিবন্ধন (Registration)

প্রপার্টি কেনা-বেচার চুক্তি নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে নিম্নলিখিত ধাপগুলি অনুসরণ করতে হবে:

  • স্থানীয় রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে চুক্তিপত্র নিবন্ধন করা
  • নিবন্ধনের সময় সকল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দেওয়া
  • নিবন্ধন ফি পরিশোধ করা

৬. স্ট্যাম্প ডিউটি ও রেজিস্ট্রেশন ফি

প্রপার্টি কেনা-বেচার সময় স্ট্যাম্প ডিউটি এবং রেজিস্ট্রেশন ফি পরিশোধ করতে হয়। স্ট্যাম্প ডিউটি সাধারণত প্রপার্টির মূল্যের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ হয়ে থাকে। রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারিত রেট অনুযায়ী প্রদান করতে হয়।

৭. মালিকানার স্থানান্তর (Mutation)

প্রপার্টি কেনার পর মালিকানার পরিবর্তন বা মিউটেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। মিউটেশন প্রক্রিয়ায় প্রপার্টির নতুন মালিকের নাম সরকারি রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এটি সম্পন্ন করার জন্য স্থানীয় ভূমি অফিসে আবেদন করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ফি পরিশোধ করতে হবে।

৮. ট্যাক্স পরিশোধ

প্রপার্টি কেনা-বেচার পর প্রপার্টির উপর আরোপিত সকল ট্যাক্স সময়মতো পরিশোধ করতে হবে। ট্যাক্স পরিশোধ না করলে আইনি ঝামেলা হতে পারে এবং প্রপার্টির উপর লিয়েন আরোপিত হতে পারে।

৯. আইনজীবীর সহায়তা নেওয়া

প্রপার্টি কেনা-বেচার সময় একটি অভিজ্ঞ রিয়েল এস্টেট আইনজীবীর সহায়তা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনজীবী প্রপার্টির সকল আইনি দিক যাচাই করে, চুক্তিপত্র তৈরি ও নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে এবং সম্ভাব্য আইনি ঝামেলা এড়াতে সহায়ক হয়।

১০. সতর্কতা অবলম্বন

প্রপার্টি কেনা-বেচার সময় সবসময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কোন তথ্য সন্দেহজনক মনে হলে সেটি যাচাই করে নিন এবং নিশ্চিত হন যে সবকিছু সঠিক এবং আইনসিদ্ধ।

প্রপার্টি কেনা-বেচার সময় উপরের এই পরামর্শগুলো অনুসরণ করলে আপনি আইনি সমস্যাগুলি এড়াতে পারবেন এবং একটি সুরক্ষিত লেনদেন সম্পন্ন করতে সক্ষম হবেন।