প্রপার্টি কেনা একটি বড় সিদ্ধান্ত এবং এর সাথে অনেক আর্থিক ও আইনগত বিষয় জড়িত। সঠিকভাবে পরিকল্পনা ও বিশ্লেষণ না করলে ভবিষ্যতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। তাই প্রপার্টি কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে আলোচনা করা হলো।

১. বাজেট নির্ধারণ

আর্থিক সক্ষমতা যাচাই: প্রথমে আপনার আর্থিক সক্ষমতা যাচাই করুন। আপনার বাজেট কতটুকু এবং সেই বাজেটের মধ্যে কোন ধরনের প্রপার্টি কেনা সম্ভব তা নির্ধারণ করুন।

বাড়তি খরচ বিবেচনা: প্রপার্টি কেনার সময় শুধুমাত্র প্রপার্টির মূল্য নয়, এর সাথে জড়িত অন্যান্য খরচ যেমন রেজিস্ট্রেশন ফি, স্ট্যাম্প ডিউটি, লোন প্রসেসিং ফি ইত্যাদি বিবেচনা করুন।

২. অবস্থান (Location)

অবস্থান ও পরিবেশ: প্রপার্টির অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, বাজার এবং অন্যান্য জরুরি সেবাগুলো কাছাকাছি আছে কিনা তা যাচাই করুন।

যোগাযোগ ব্যবস্থা: প্রপার্টির আশেপাশে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো কিনা এবং রাস্তাঘাট ও পরিবহন সুবিধা সহজলভ্য কিনা তা যাচাই করুন।

৩. ডেভেলপার এবং প্রপার্টির নির্ভরযোগ্যতা

ডেভেলপারের সুনাম: প্রপার্টি ডেভেলপারের পূর্ববর্তী কাজ এবং বাজারে তাদের সুনাম সম্পর্কে জানুন। নির্ভরযোগ্য ডেভেলপারের প্রপার্টি কেনা নিরাপদ।

প্রপার্টির আইনগত যাচাই: প্রপার্টির দলিল, জমির মালিকানা এবং অন্যান্য আইনগত বিষয় যাচাই করুন। জমি বা ফ্ল্যাটের ওপর কোন মামলা বা লেনদেন ঝামেলা আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।

৪. প্রপার্টির অবস্থা ও মান

নির্মাণ মান: প্রপার্টির নির্মাণ মান এবং ব্যবহার করা উপকরণের গুণগত মান যাচাই করুন। দুর্বল নির্মাণ মানের প্রপার্টি ভবিষ্যতে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

পরিবেশ ও পরিষেবা: প্রপার্টির আশেপাশের পরিবেশ এবং প্রপার্টির ভেতরের পরিষেবা যেমন পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ইন্টারনেট ইত্যাদি সুবিধা ঠিকমত কাজ করছে কিনা তা যাচাই করুন।

৫. ভবিষ্যৎ মূল্যায়ন

মূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা: প্রপার্টির ভবিষ্যৎ মূল্য বৃদ্ধি সম্ভাবনা সম্পর্কে জানুন। সঠিক স্থানে এবং উন্নয়নশীল এলাকায় প্রপার্টি কিনলে ভবিষ্যতে তার মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

ভাড়ার সম্ভাবনা: আপনি যদি প্রপার্টি ভাড়া দেওয়ার পরিকল্পনা করেন তবে তার ভাড়ার সম্ভাবনা এবং বর্তমান ভাড়া বাজার সম্পর্কে জানুন।

৬. ব্যাংক লোন এবং ফিন্যান্সিং

লোনের সুযোগ: আপনার ব্যাঙ্ক থেকে কি ধরনের লোন সুবিধা পাওয়া যাবে তা জানুন। লোনের ইন্টারেস্ট রেট, শর্তাবলী এবং পুনঃপেমেন্ট পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।

EMI পরিকল্পনা: আপনার মাসিক আয় এবং ব্যয়ের সাথে মিল রেখে EMI পরিকল্পনা তৈরি করুন। লোনের জন্য আবেদন করার আগে EMI হিসাব করে নিন।

৭. অন্যান্য সুবিধা

অ্যামেনিটিস: প্রপার্টির সাথে থাকা অন্যান্য সুবিধা যেমন পার্কিং স্পেস, কমিউনিটি হল, সুইমিং পুল, জিম ইত্যাদি সুবিধা সম্পর্কে জানুন।

সিকিউরিটি ব্যবস্থা: প্রপার্টির নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেমন সিসিটিভি, নিরাপত্তা রক্ষী এবং অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালোভাবে যাচাই করুন।

উপসংহার

প্রপার্টি কেনা একটি জটিল প্রক্রিয়া, তবে সঠিক পরিকল্পনা এবং যাচাই-বাছাই করে বিনিয়োগ করলে এটি লাভজনক হতে পারে। উপরোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রেখে প্রপার্টি কেনার সিদ্ধান্ত নিলে আপনি একটি সঠিক এবং নিরাপদ বিনিয়োগ করতে পারবেন। সঠিক পরামর্শ এবং পেশাদার সাহায্য নেওয়াও এ ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।